তুলসী গাছটির নিচে আর কেউ সন্ধ্যাদীপ জ্বালাবে না, ফজরের নামাযে আর কেউ ডেকে দিবে না!
প্রতিদিন যে মেয়েটি সন্ধ্যাদীপ জ্বালাতো আজকের পর থেকে সেই মেয়েটি আর কখনো
প্রদীপ জ্বালাবে না। যে ছেলেটি নিয়মিত নামায পরে, হয়তো এরপর থেকে তার
ফজরের নামাযটি কাজা হয়ে যাবে ঘুমে আচ্ছাদিত থেকে। হয়তো জীবন থেকে হারিয়ে
যাবে স্নিগ্ধ প্রেম, স্রস্টা প্রদত্ত ভালবাসা!
আজ থেকে প্রায় ৪ বছর
আগে এই মেয়েটির সাথে প্রথম দেখা হয় মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরীতে। রুমে পড়তে
ভাল না লাগায় নিয়মিত লাইব্রেরীতে যেতাম। একটি মেয়েকে
দেখতাম সবসময় লাইব্রেরীর একটি নির্দিষ্ট দিকেই বসে পড়তে। একদিন গ্রে এর
এনাটমি বই নিয়ে এসে একটি মেয়ে আমাকে বলছে হার্টের ভালব এর গঠন বুঝিয়ে দিতে।
সেই থেকে রুবি মেয়েটির সাথে পার্টনারশিপ শুরু। নিয়মিত একসাথে লাইব্রেরী
তে পড়তাম, রাতের বেলায় মোবাইলে একে অন্যকে প্রশ্ন করতাম আর উত্তর শুনতাম।
এভাবে কেটে যায় ১ বছর। ধীরে ধীরে মেয়েটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে আমার নতুন
পৃথিবী! যে পৃথিবী রুবি রায় ছাড়া অর্থহীন! আমার স্বপ্নময় পৃথিবীর একমাত্র
রাণী সে। তার স্বপ্নলোকের একমাত্র অধিপতি আমি দিপ্ত!
একদিন সকালে আমার বুকে মাথা রেখে সে জানাল, তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু
আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে সে জীবন সাথি হিসেবে মেনে নিতে পারবে না! আমিও পারব
না তাকে ছাড়া অন্যকাউকে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিতে! দুজনে মিলে তখনই
কাজি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করার সিধান্ত নিলাম। কাজি, কনের
সম্পূর্ণ নাম শুনে, বরের সম্পূর্ণ নাম শুনলে, আমরা হতবম্ভ হয়ে পড়ি! কনে
রুবি রায়, হিন্দু; বর দিপ্ত রহমান, মুসলিম! আমি নিস্তব্ধ কারণ এতোদিন আমি
রুবিকে মুসলিম হিসেবেই জানি, রুবি নির্বাক সে আমাকে এতোদিন হিন্দু হিসেবেই
জানে! সেদিন কাজি অফিস থেকে ফিরে দুজনেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চেষ্টা
করি কিন্তু ব্যর্থ হয়। দুজনে বিশাল এক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরের মাসেই বিয়ে করে
ফেলি।
দাদা-দাদির স্বপ্নকে, বাবা-মায়ের চাওয়াকে, নিজেদের সুন্দর
জীবন গড়তে আমি ও রুবি দুজনেই কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করি। একে অপরের প্রতি
নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, ভালবাসা আরো গভীর আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠে। আমি নিয়মিত
নামায পড়ি আর আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন সারাজীবন আমাদের দুজনের জীবন
স্নিগ্ধ ভালবাসায় পরিপূর্ণ থাকে, সারাটি জীবন যেন এক সাথে পার করে দিতে
পারি। রুবিও নিয়মিত পূজা অর্চনা করত, আমাদের বাসার বারান্দার সামনে তুলসী
গাছের নিচে সন্ধ্যাদীপ জ্বালাতো। কখনো খুনশুটি করে, কখনো পার্টনারশিপ করে
দুজনে রাত ১২টা /১টা প্রযন্ত জেগে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম কিছুই
টের পেতাম না। ভোরে রুবির ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গত আমার। ফজর নামাযের জন্য
আমাকে ডাক দিয়ে, পূজোর ঘরে ঢুকতো রুবি। এভাবেই খুশিতে দিন কেটে যেত
আমাদের!!
কিন্তু সুখ চিরদিন স্থায়ী হয় না! পূর্নিমার এই স্নিগ্ধ আলো
অমাবস্যার গহীন অন্ধকারে ঢেকে যাবে কাল থেকে! কালকে রুবিকে আমার কাছ থেকে
চিরদিনের জন্য নিয়ে যাবে, তার বাবা!
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে আমার বুকে
মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে রুবি!! চারিদিকে ঘন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে..... কোথাও
কোন আলোক রেখা দৃষ্টগোচর হয় না......গভীর অন্ধকারে দৃষ্টি ক্ষীন হয়ে আসছে
আমার.......