Saturday 1 March 2014

অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ের সাঁজ !!!!!!!!


জানালার কাঁচ বেয়ে বড় বড় বৃষ্টির ধারা অঝোরে নামছে। প্রচন্ড বৃষ্টিতে কিছুই দেখা যায় না বাইরে। আর বারান্দার দরজা আর জানালা দিয়ে আসছে ঠান্ডা শীতল হাওয়া। বাইরে আমগাছের পাতা ভীষণভাবে কাঁপছে, যেন প্রচন্ড দাবদাহের পরে এই অঝোর বর্ষণে বাইরের প্রতিটা ক্লান্ত মানুষের মতই গাছটাও তৃপ্ত। মাঝে মাঝে এক আধ ফোঁটা বৃষ্টির ছিটে লেগে চলে আসছে ভিতরে, আমার উদোম দেহে লেগে তা ভীষণ কাঁপুনি তুলছে। ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক আমার অনেক পছন্দ, ধীর লয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বেজে চলেছে।

বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বানানো লেহেঙ্গার চোলির কাঁধটা নেটের। আর পেটের নাভী পর্যন্ত গিয়েই চোলি শেষ, এটির ওপরে ওড়না পেচিয়ে অনেকটা শাড়ি শাড়ি লুক দেয়া হয়েছে। বলতে গেলে তখন থেকেই আমি এই সুন্দর রয়্যাল ব্লু ঘাগড়া আর আকাশী চোলিটার জন্য পাগল হয়ে আছি ! ভাবীই এটি আমাকে এইমাত্র দিয়ে গিয়েছেন, আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে পড়ার জন্য ।

লেহেঙ্গা হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি । ভাবী যাওয়ার সাথে সাথে আমার বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। জীবনে কখনো এসব পড়ার সুযোগ হয় নি আমার। গ্রামের এক পাড়া গায়ে আমার বেড়ে উঠা । কৃষক বাবার মনের ইচ্ছেটাকে পূরণ করতেই গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছি । মনের মাঝে উচ্চ শিক্ষার কামনা থাকলেও সেটা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল । হয়তো আমার মা বেঁচে থাকলে আমার এই স্বপ্নটাও হাজার কষ্টের মাঝেও পূরণ হত ! কিন্তু আমার বর্তমান মা ওতটা কষ্ট করতে চান নি ! কেনই বা চাবেন ??? ঘরে যে আমার আরো দুই বোন ও এক ভাই আছে । একমাত্র আমার স্বপ্নটাকে পূরণ করতে গিয়ে ওদেরতো তিনি পথে বসাতে পারেন না ! তারা না হয় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে না, তবে জীবনে চলতে গেলে যতটুকু জানার প্রয়োজন আছে ততুটুকুতো শিক্ষতে পারবে ! অন্তত এসএসসি অথবা এইসএসসিতো পাশ করতে পারবে । এক আমার জন্যই কেন ওদের একেবারে মূর্খ হয়ে থাকতে হবে ??????

বিধাতার মনে হয় অন্যরকম ইচ্ছে ছিল ! একদিন সন্ধ্যা রাতে রুমের ভিতর বসে ভাই-বোনরা মিলে গল্পগুজব করতে ছিলাম । এমন সময় বাড়ির পাশের এক চাচী এসে আমার মায়ের সাথে কি যেন আলোচনা করে চলে গেল। মা আমায় ডেকে নিয়ে আমার মাথায় তার আদরের হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। মায়ের মুখে ছিল বিষণ্ণতার হাঁসি ! মনে হয় তিনি তার প্রিয় কোন কিছু হারিয়ে ফেলবেন, যেটা তার জীবনের চেয়েও প্রিয় । আমি ধীরে ধীরে মায়ের কাছে তার বিষণ্ণ হাঁসির কারন জানতে চাইলাম । বিষণ্ণ মনেই তিনি আমাকে বললেন, তোমার ওই চাচী আমাকে বলেছে “ তার বউমার কয়েকমাস আগে একটা মেয়ে হয়েছে । তার ছেলের বউ কিছুটা অসুস্থ, এই অসুস্থ শরীরে সে একা তার বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে হিমশিম খাচ্চে । তুমি যদি শহরে ওদের বাড়িতে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখাশোনা কর তাহলে ওরাই তোমাকে ওখানে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবে । তুমি সকালে কাজ শেষ করে কলেজে যেতে পারবে, আবার রাতে পড়ার জন্য যদি সুযোগ থাকে পড়তেও পারবে। আমি ওদের এখনো কিছু বলি নি । তুমি যেটা বলবে সেটাই আমি ওদের জানিয়ে দেব ।” সেদিন নীরবে রুমে চলে এসেছিলাম । সারারাত নানা বিষয়ে নিজেকে ভাবনার সাগরে ডুবিয়ে রেখেছিলাম । সেখানে আমি কিভাবে থাকব ?? সেখানে আমার কি কি অসুবিধা হতে পারে ?? আমাকে তারা কিভাবে গ্রহন করবে ?? আমার সেখানে যাওয়া উচিত কিনা ?? .................................... ইত্যাদি ইত্যাদি !!! এভাবে ভাবতে ভাবতে সেদিন গভীর রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । অবশেষে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল যেটা আমার জীবনে অনেক সুখ এনে দিয়েছিল।

যেদিন প্রথম আমি ভাবীর এ বাড়িতে পা রাখি সেদিন মনের মাঝে এক অজানা ভয় ছিল । সেদিন আমাকে দেখে ভাবী অনেক খুশি হয়েছিল । আমাকে তার পাশে বসিয়ে অনেক অনেক গল্প করেছিল । ভাবীরা এক ভাই আর এক বোন । ভাবীর চেয়ে তার ভাই পাঁচ বছরের ছোট । ভাইয়ের বয়স যখন দুই বছর তখন তাদের মা মারা যায় । সেই সাত বছর বয়স থেকেই ভাবী তার ভাইকে নিজ সন্তানের মতো বড় করে তুলেছে । সেই থেকেই ভাইটি ভাবীকে নিজের মায়ের মতো দেখে । নিজের জীবনের চেয়েও ভাবীকে বেশী ভালোবাসে সে । ভাবীর প্রতিটা কথা সে বেদ বাক্য হিসেবে মেনে চলে । .........ইত্যাদি...... ইত্যাদি !

ভাবীর বিয়ে পারিবারিক ভাবে হলেও পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকতে হতো ভাবীদের । ভাই নিজের টেক্সটাইল কোম্পানি নিয়ে এতোই ব্যস্ত থাকতেন ইচ্ছে থাকলেও ভাবীকে সাহায্য করতে পারতেন না। যেদিন সুযোগ পেতেন সেদিন ভাই ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন । আমার সাথে তিনি আপন বোনের মতোই ব্যবহার করতেন । সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করে আমি নিজের পড়াশোনা আর রিমিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম । ছোট্ট রিমি বেশীর ভাগ সময়ই আমার কাছে থাকত । মার চেয়ে আমাকেই বেশী জ্বালাতন করতো । আমিও ধীরে ধীরে রিমিকে আপন করে নিয়েছিলাম । নিজের সন্তানের মতোই রিমিকে আগলে রাখতে চেষ্টা করেছি ।

আমার এইসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর ভাবী একদিন আমাকে কাছে ডাকলেন । তার চোখের মাঝে এক অজানা ভয় দেখতে পেলাম । আমাকে পাশে বসিয়ে ভাবী বললেন, “ গতকাল ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম । আমার শরীরটা দিনে দিনে খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে । জানিনা আমি এভাবে আর কতদিন চলাফেরা করতে পারব ! শরীরটা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ! হাত-পা কেমন যেন অবশ হয়ে থাকে ! অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তোবা আমি সব কিছু থেকে অবসর নিতে বাধ্য হব । আমার সংসার, আমার ভাই, আমার মেয়ে সব কিছু থেকেই । আমি চায়না এসব কিছু ধ্বংস হয়ে যাক । আমি চায় এগুলোকে এমনি ভাবেই রেখে দিতে। জানি একমাত্র তুমিই এগুলোকে আমার মতো করে আগলে রাখতে পারবে । তোমার সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে সবকিছু আমি তোমার হাতে তুলে দিতে চায় । তুমি পারবে না? রিমিকে এখনকার মত সারা জীবন আগলে রাখতে! নিজের মেয়ের মত করে ! রিমিকে নিয়েই আমার যত ভয় ! জানি তুমিই পারবে রিমিকে নিজের মেয়ের মত করে আগলে রাখতে । রিমির মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত এই বিয়েতে না বল না । আমার ভাইও রিমির মুখের দিকে তাকিয়ে এই বিয়েতে না বলেনি।”

সেদিন নীরবে নিজের রুমে চলে এসেছিলাম । নানা রকম ভাবনা মনের মাঝে জেগে উঠেছিল। মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে কোন শিশু কোনদিন সুখের দেখা পাই না । মাকে হারানোর ব্যথা সেদিন আমার মনে আবার নতুন করে জেগে উঠেছিল । ছোট্ট নিষ্পাপ রিমির কি অপরাধ ?? রিমিতো আমাকে নিজের মায়ের চেয়েও বেশী ভালবাসে ! আমিও রিমিকে নিজের সন্তানই মনে করি । তাছাড়া সাগরের মতো ছেলে খুঁজে পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার । টেক্সটাইল থেকে পাশ করে বোনের কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছে সে । বর্তমান যুগের ছেলেদের মত বখাটে নয় । গত দুই বছর একই সাথে একই বাড়িতে থাকার পরেও তার কোন খারাপ আচরণ আমার চোখে পড়েনি আজও। বরং আমার নিজের ভুলে তার সাথে কয়েকবার ধাক্কা লাগলেও সে আমার আগেই ক্ষমা চেয়েছে। আমার বাবা-মায়ের এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই বরং তারা অনেক খুশি এমন বড় ঘরে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিবে বলে । তাহলে এই বিয়েতে কেমন করে আমি না বলি?? সেদিন থেকেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছিল, যেটা এখন ও চলছে ।

এভাবে কতক্ষণ থাকবো আমি ? আমার মনের মাঝে নানা অজানা ভয় জড় হচ্ছে । এরই মাঝে ভাবী চলে আসলেন। তবে ভাবী এসে আমার দিকে মোটেও তাকালো না। ঝটপট আমাকে সিল্কের রয়্যাল ব্লু ঘাগড়াটা পড়িয়ে ফেলল। দেখতে যেমন কোমল, জিনিসটা পড়তেও ঠিক ততটাই কোমল! আমার পায়ের পাতা উরু, গুরুনিতম্ব, অথবা পাতলা কোমর – কোথাও আমি অনুভব করতে পারলাম না যে আমি অনেক ছড়ানো একটা জিনিস পড়ে আছি। আমি এক-দু কদম সামনে পিছে লেহেঙ্গা ছড়িয়ে ফেলে হাটলাম। আমার বুকের মাঝে ভীষণ আলোড়ন উঠলো; সে আলোড়ন আমি আমার সারা শরীরে অনুভব করতে পারলাম। আমার এই লজ্জা লুকানোর তীব্র প্রচেষ্টা দেখে ভাবী বেশ মজা পেল!

একটু পরেই আমাকে নেট আর পাথর বসিয়ে ডিজাইন করা সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির কালো হাইহিলটা পড়ে হাটতে হলো। হাইহিলটার নিচে মোটামুটি এক ইঞ্চি উঁচু একটা প্ল্যাটফর্মের মত আছে, আর পিছে গোড়ালির নিচে পুরো সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি উঁচু হিলটা। যেহেতু বিয়ের অনুষ্ঠানের জুতা কাজেই জুতার ফিতাতে বেশ জাঁকজঁমক ডিজাইন করা। তবে ফিতা মাত্র দু্টো, ক্রস করা। আর গোড়ালির ওখানে একটা ফিতা আছে লেস সহ। এমন হিল জুতোয় ব্যালেন্স রাখা বেশ কষ্ট, শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তে বেঁছে গিয়েছি।

এরপরে চোলি পড়ানোর পালা। ব্যাকলেস চোলি, পিঠের নিচের দিকে ৩টা হুক বসানো আছে ব্লাউজের মত। বাইরে থেকে দেখা যায় না যদিও, তবে অভিজ্ঞ চোখ ঠিকই খুঁজে নেবে। তার উপর থেকে নেট শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত একটা আকাশী সিল্কের ফিতা ক্রস করে করে লাগানো। কাঁধ আর স্লিভ-টা নেটের। স্লিভটা একেবারেই ছোট, আর শুধু বাহুর সামান্য ঢেকে আছে। বলতে গেলে বাহুমূল পুরোপুরিই উন্মুক্ত।

পুরোপুরি পারফেক্টভাবে আমাকে চোলিটা ফিট করলো, এমনকি কোনখানে ফিতাকে একটুও বেশি বাঁধতে হলো না! নাভির ৩ ইঞ্চি উপরে গিয়েই চোলিটা শেষ। এরপরে নিচে পেট পিঠ দুটোই বের হয়ে আছে। আমার ফর্সা দেহ যে এতখানি এটার সাথে মানিয়ে যাবে সেটা সেটা আমি কখনো কল্পনায় করতে পারিনি।

“ননদিনী, তুই কি জানিস তোর যে আসলে রাজার ঘরে জন্মানো উচিত ছিলো?”

“এখন বুঝতে পারছি। আগে বুঝিনি।” ভীষণ লজ্জা নিয়ে কথাটা বললাম।

“এসো তোমাকে এখন সাজিয়ে দেই।” চেয়ারে চুপচাপ বসে পড়লাম।

লেহেঙ্গা পড়তে তো ২০ মিনিটও লাগেনি, মেকআপ করতে পুরো দেড়টা ঘন্টা লাগলো। শুধু চোখে কন্টাক্ট লেন্স পড়ার সময়টুকু ছাড়া বাকি পুরো সময়টা আমি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে থেকে শুধু টের পেলাম আমার ত্বকের আর মুখের উপরে ভেজা স্পর্শ, বিভিন্ন রকম ব্রাশের ছোঁয়া, চুলে টানাটানি, হাতে চুড়ি, সব নখে নেইলপলিশ, গ্লিটারের মেহেদি, পায়ে পায়েল এইসব পড়িয়ে দেওয়া, বিভিন্ন রকমের স্প্রে……কতকিছু দিয়ে সাজে বড়লোকের মেয়েরা!

সবকিছু হয়ে যাওয়ার পরে আমি যখন আয়নার সামনে গেলাম; না! কোনভাবেই নিজেকে চিনতে পারছি না আমি। কে দাঁড়িয়ে আছে এটা আয়নাতে? এ যে সপ্নপুরীর রাজকন্যা !

আমার চুল আমার পিঠ পর্যন্ত ছিলো তবে এখন এক্সটেনশনের কল্যাণে সেটা পিঠ পার হয়ে নেমে এসেছে কোমরে । চুলটা ফুঁলেফেপে আছে, সেই সাথে চিকচিক করছে আর মিষ্টি একটা গন্ধ। সবই হেয়ারস্প্রে’র ফল। আবার মুখে একটা পাতলা আলগা স্তর, আমার ত্বকটা ওটার কারণে কোমল থেকে আরো কোমল হয়ে আছে। টসটসে লাল গালটা হাসলেই একটা মিষ্টতা ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে। চিকচিকে লাল রঙের লিপস্টিকটা এতই বেশি মানিয়েছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে লজ্জা করছে।

ভাবী তার সাজগোজের দক্ষতার প্রমাণ দেখিয়েছে চোখে। কি যে অপূর্ব লাগছে! পাতলা ভ্রু-র উপরে কাজল আর মাশকারা লাগিয়ে ভ্রু জোড়াকে আরো সুন্দর বানিয়ে ফেলেছে। চোখের কোল ঘেষে গাঢ় করে কাজল দেওয়া, চোখের কোণার দিকে নিচে কোল ঘেষে কালো আইশ্যাডোর ঘষা দিয়ে চোখটা ভীষণভাবে স্মোকি বানিয়েছে। উপরের পাতায় নেভি ব্লু আইশ্যাডোর বেসের উপরে বিভিন্ন রঙের খেলা; কালো, রূপালী, সোনালী। আসল পাঁপড়ির উপরে দুটো করে ফেইক ল্যাশ লাগানো, চোখের পাঁপড়ি ভীষণ ভারী হয়ে আছে। তবে যখন পলক ফেলছি তখন পুরো ব্যাপারটা সিনেমার নায়িকাদের মত লাগছে! আর কর্ণিয়ার উপরে লাগানো গাড় নীল কন্টাক্ট লেন্সটা যে আমার ইনোসেন্ট চেহারার মধ্যে একটা ওয়াইল্ড লুক নিয়ে আসবে এটা তো আমি কল্পনাও করিনি।

নেটে আবৃত প্রায় উন্মুক্ত কাঁধের নড়াচড়া ভীষণ রকমের অসস্থিতে ফেলছে আমাকে । ঠেলে বের হওয়া কলার বোনের কল্যাণে আরো বেশি অসস্থি অনুভব করছি। সারা দেহে সোনার গহনায় আমি আবৃত। গলায় সোনার ছড়ানো হার, কপালে টিকলি। নাকে নাকফুল, টানা নথের আরেক প্রান্ত গিয়ে মিশেছে দুলের সাথে। ক্লিপসহ দুল অপূর্ব নৈপণ্যে আমাকে পড়িয়েছে ভাবী। গলার হারের সোনালী ফিতা পিঠের উপরে ঝুলে আছে। না, আমার আগে কখনো এসব ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। গরীবেরা কখনোই এসব পড়ার সুযোগ পায় না।

আমি এখন বিশাল বিছানায় ঘাগড়া ছড়িয়ে দিয়ে বসে আছি। মাথা অবনত, গ্লিটার মেহেদী রাঙানো একটা হাত আরেকটার উপরে রাখা। মাঝেমধ্যে মৃদু নাড়া লেগে সোনার বালাগুলো আওয়াজ তুলছে। বাইরে তখনো ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির শব্দ এখন আমার কাছে কেন যেন করুণ মনে হচ্ছে। মনের কোণে বিষাদ, যেন আমি আসলেই বাবা মা ছেড়ে নতুন সংসারে এসেছি, আমার জামাইয়ের ঘর করতে।

বৃষ্টির জন্য আজ অন্যদিনের তুলনায় বেশ আগেই সন্ধ্যা নামছে। আমি চোখ তুলে সে দৃশ্য দেখতে পারছি না। আমি নতুন বউ, জামাই এসে ঘোমটা সরানোর আগে চারপাশ দেখা যে আমার সাজে না!

Dr. Zubiear

About Dr. Zubiear

Author Description here.. Nulla sagittis convallis. Curabitur consequat. Quisque metus enim, venenatis fermentum, mollis in, porta et, nibh. Duis vulputate elit in elit. Mauris dictum libero id justo.

Subscribe to this Blog via Email :