Showing posts with label অনু গল্প. Show all posts
Showing posts with label অনু গল্প. Show all posts
Sunday, 8 May 2016
Sunday, 31 May 2015
ভালবাসার প্রতিক্ষার অবসান
ঘুম থেকে উঠেই ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা একগুচ্ছ গোলাপের দিকে দৃষ্টি আটকিয়ে যায় নিশাতের!! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না! ভাবছে মনে হয় স্বপ্ন দেখছে সে!! গায়ে চিমটি কেটে শিওর হয়ে নেয়!! না... এতো স্বপ্ন নয়..... এতো বাস্তব.....
এতো সুন্দর করে একগুচ্ছ গোলাপতো শুধু একজনই বাঁধতে পারে কিন্তু সেতো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে!! হৃদয়ের মাঝে ধীরে ধীরে গড়ে উঠা স্বপ্নকে কাচের টুকরোর মতো ভেঙ্গে ছারখার করে দিয়েছে!! জীবনের আশার প্রদীপ এক নিমিষেই নিভিয়ে দিয়ে চলে গেছে অনেক দূরে!! যাকে মনে রাখার কারনে জীবনকে নতুনভাবে গড়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে!
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ফুলের মাঝে থাকা এক টুকরো কাগজের দিকে চোখ আটকে যায় নিশাতের!! সেই পরিচিত হাতের লেখা...... একই ধরনের অভিব্যক্তি..... নিশি.....
"নিশি
তোমাকে কিভাবে সম্বোধন করব বুঝতে পারছি না! তোমাকে অভিবাধনের ভাষা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি!! নিজের মনের মাঝে গড়ে উঠা পাহাড়সম দুঃখে সবকিছু চাপা পড়ে আছে!! সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় খুজে পাইনি!!
জানি না তোমার মনের মাঝে আমার জন্য ভালবাসার পরিবর্তে এখনো ক্ষোভ-অভিমান জমে আছে কিনা!! শুধু জানি আমাকে ভেবে ভেবে অনেক কষ্ট পেয়েছ!! আমাকে ভেবে ভেবে অঝোরে দুচোখের জল ফেলেছ!! আমাকে ভেবে বিনিদ্র রজনী পার করেছ!! ফোনের পর ফোন আর ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ এর পরেও কোন সাড়া পাওনি!! শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা!!
অথচ আমি অতি সহজেই তোমাকে ভুলে যেতে পারলাম.... এটাই তোমার বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গড়ে উঠেছে!! কিন্তু বিশ্বাস কর.. তোমাকে ছাড়া আমার একমুহূর্তও সুখে কাটেনি!! হৃদয়ের প্রতিটি জায়গায় সর্বদা একমাত্র তোমার ছবিই ভেসে থাকত, এখনো ভেসে উঠে!!
রাতের বেলায় তোমার পাঠানো ম্যাসেজগুলো বার বার পড়েছি আর দুচোখ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত করেছি !! পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় যখন চারিদিকে আলোকিত থাকত তখনো আমার মন অমাবস্যার গহীন অন্ধকারে ঢেকে থাকত!!
সেদিন তোমার সাথে দেখা করে রুমে এসে জানতে পারলাম, আমার বাবা খুব অসুস্থ!! বাসা থেকে আমাকে অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় আমার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে রুমমেটকে বাবার অসুস্থতার খবর জানিয়েছে!! সেই রাতেই আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছিলাম।
পরেরদিন ভোরে যখন পোঁছালাম তখন বাবার অবস্থা অনেক খারাপ! তার পাশে রাখা কাগজ দেখে বুঝতে পারলাম উনার হ্যার্ট এট্যাক হয়েছে! বাবা আমাকে অনেক ভালবাসে, আমিও বাবাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসি, সম্মান করি! আমি আমার বাবার চোখের মণি!!
আমাকে দেখেই বাবা যেন সস্থি ফিরে পেল, অসুস্থ থেকে একদিনেই অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল! বিকেলে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলেছিল, তার অনেক দিনের ইচ্ছে আমার সাথে তার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে দিবে! বন্ধুর মৃত্যুর সময় নাকি তিনি হাত ধরে কথা দিয়েছিলেন তাকে!!
কথাগুলো শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল! একদিকে আমার হৃদয়ে গড়ে উঠা স্বপ্নের রানী, অন্যদিকে আমার প্রাণপ্রীয় বাবা!! পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করে তার সবকিছুকে মেনে নিতে!!
তুমিতো ভালভাবেই জানো একজন MI পেশেন্টের সুস্থ হওয়ার অন্যতম উপায় তাকে টেনশন ফ্রি রাখা!
আমি চেয়েছিলাম তোমার জীবনকে সুন্দর ও সুখি দেখতে! আমাকে ভেবে ভেবে তুমি যেন তোমার জীবনকে ধ্বংস করে না দাও এজন্যই সেদিন তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম!! যদি পার ক্ষমা করে দিও!!
এরপরেও সর্বদা শুধু তোমাকেই ভাবতাম! তোমার সাথে কাটানো সুখের স্মৃতিগুলোকে আকড়ে ধরে বেচে থাকতাম!
এভাবে কেটে যায় ২ বছর। একদিন শুনতে পেলাম বাবার সেই বন্ধুর মেয়েটি তার প্রেমিককে বিয়ে করেছে।
সেদিন নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়েছিল!! একজনকে হৃদয়ে স্থান দিয়ে অন্যজনের সাথে সারা জীবন অভিনয় করে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ! হয়তো সেদিন তোমার কাছে ফিরে আসতে পারতাম কিন্তু সেদিন আমি তোমার ভালবাসাকে নতুনভাবে কলঙ্কিত করতে চায়নি!!
এরপরে কেটে গেছে আরও ৫টি বছর!! হঠাৎ একদিন BSMMU এর লাইব্রেরীতে তোমাকে দেখতে পায়! এক কলিগের কাছে জানতে পারি তুমিও আমার মতো এখানে ট্রেনিং করছ। কিন্তু শুনে অবাক হয় যে, তুমি তোমার প্রীয় মেডিসিনে চাঞ্চ পাওয়ার পরেও ভর্তি হওনি, ভর্তি হয়েছ আমার প্রীয় বিষয় সার্জারিতে!! যেমন আমি ভর্তি হয়েছি তোমার পছন্দের মেডিসিনে!! তার থেকেও বেশী অবাক হয়েছি, এখনো তুমি আমার মতো বিয়ে করনি, একথা শুনে!!
তোমাকে এভাবে দেখব কখনো কল্পনাও করতে পারিনি! তোমাকে এভাবে দেখার পর থেকে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি!! সেদিন সারা রাত শুধু তোমাকে নিয়ে ভেবেছি!! বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি! অনেক ভেবে আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি! নতুন করে বাচার সিদ্ধান্ত, নতুন করে জীবন গড়ার সিদ্ধান্ত!
এভাবে ভালবেসে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে আমরা কি পারিনা আমাদের জীবনকে সজীবতা দান করতে?? নতুন করে সবপ্ন দেখতে?? ভালবাসার পূর্নতা দিতে??? দুঃখের স্মৃতিগুলোকে মুছে ফেলতে??
সন্ধায় তোমার অপেক্ষায় রইলাম, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল! যেখানে আমাদের প্রেমের সূচনা হয়েছিল! যেখানে দুজন জীবনকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলাম!! যেখানে আমাদের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল!!
অপেক্ষায় রইলাম তোমার আগমনের..... নতুন জীবনের ......
ইতি
তোমার তাসনিম"
চিঠিটি পড়েই নিশাতের চোখদিয়ে আনন্দ অশ্রু বইতে শুরু করেছে।
এ যেন জীবনে সমস্ত আশার প্রদীপ নিভে গিয়ে হটাৎ জ্বলে উঠা কোন সূর্য! আকস্মিক কোন অন্ধকার গুহা থেকে স্বপ্নপুরীতে পদার্পণ !!
পূর্ণিমার চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত চারিদিক। শহীদ মিনারের পাদদেশে বসে আছে নিশাত আর তাসনিম !
স্নিগ্ধ আলোর আভায় নিশাতের মায়াবী চেহারা আরো মনোহরণীয় হয়ে উঠছে । ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা মিষ্টি হাসি হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি করছে। হরিণের মতো মায়াবী চোখদুটির উপর তাসনিমের চোখ স্থীর হয়ে আছে। মাঝে মাঝে দক্ষিণা বাতাসে নিশাতের চুলগুলো উড়ছে।
বেদিতে রাখা নিশাতের হাত আকড়ে ধরে তাসনিম! দুজনের সারা শরীরে কেমন যেন এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়! বুকের মাঝে জমে থাকা বরফ মুহূর্তেই উবে যায়! জেগে উঠে, সমস্ত দুঃখ ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য বাসনা! দুজনের চোখে ভেসে উঠে নতুন স্বপ্ন!
Thursday, 21 May 2015
নয়নিকা !!!!!!!!!!
সায়নের বুকের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটি। মেয়েটি এখনো তার তুলতুলে হাতের মাঝে সায়নের হাতকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। যেন পৃথিবীর কোন শক্তি, এমনকি মৃত্যুও যেন, তার হাতকে আলাদা করতে না পারে। রাতে যে এভাবে ঘুমিয়ে পড়বে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি মেয়েটি।
ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটিকে এমন অবস্থায় দেখে কিছুটা মায়া হয় সায়নের। মেয়েটির চাঁদের মতো সুন্দর স্নিগ্ধ মুখটি, কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। চুলগুলো এলোমেলে, মায়াবী চোখের সেই মনোহরীনি চাহনি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। শুষ্ক, বিবর্ণমুখ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারে, মেয়েটি গত ২/৩ দিন কঠোর পরিশ্রম করেছে! এমনকি রাতেও ঠিকভাবে মনে হয় ঘুমাতে পারেনি!
নয়নিকার হাতের মধ্য থেকে নিজের হাতটিকে খুবই সতর্কভাবে বের করে নেয় সায়ন, যাতে নয়নিকার ঘুম না ভেঙ্গে যায়। মেয়েটির মাথায় আলতোভাবে হাত বুলাতে থাকে সায়ন আর মনে করতে চেষ্টা করে কি হয়েছিল তার।
মেয়েটি বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমানোর সময় সায়ন এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করে। এতো হারিয়ে যাওয়া সেই হৃদয়ের সুখ! অথচ এই মেয়েটিই আজ থেকে ২ সপ্তাহ আগে বাসর রাতে যখন এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিল, তখন হৃদয়ের মাঝে সুখের পরিবর্তে কেমন যেন একটা হাহাকার, শূন্যতা অনূভূত হয়েছিল।
এমন প্রফুল্ল সুখ সর্বশেষ আজ থেকে ১মাস আগে অনুভব করেছিল। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। সায়ন আর নয়নিকা সেদিন রাত ৯টা-১০টা প্রর্যন্ত ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বসে ছিল! এখানেই তারা প্রতিদিন দেখা করত। কিভাবে তাদের জীবন সুন্দর হবে, সুখী-সমৃদ্ধ হবে! বিয়ের পরে পরিবারের সবাইকে কিভাবে আপন করে নিবে!!
কিন্তু সেদিন তাদের জন্য দিনটি ছিল আরো সুখের-আরো খুশির!! তাদের দুজনের পরিবারের সম্মতিতে আগামি মাসেই তাদের বিয়ে হবে!!
এই নয়নিকা মেয়েটিকেই প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসে সে। জীবনের এই স্নিগ্ধ ভালবাসা ও সুখের পিছনে এই নয়নিকা মেয়েটির অবদান অনেক। ফাইনাল প্রফে ফেল করে সায়নের জীবন হয়ে গিয়েছিল দুর্বিষহ! গভীর অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল সে। এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছিল যে সাপ্লি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল সে।
সেই গভীর অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে এই নয়নিকা মেয়েটির ভূমিকায় মূখ্য। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনুপ্রেনায় অবশেষে সায়ন ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করে এবছর।
সেদিনের পর থেকে সায়নের সাথে নয়নিকার আর দেখা হয়নি, বিয়ের আগ প্রর্যন্ত!! কিন্তু সেদিনের নয়নিকা যেন এক অন্য নয়নিকা!! সায়ন ভেবেছিল অপরিচিত মানুষের মাঝে নিজেকে সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে!! সায়নও এটাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নেই!!!
কিন্তু আজ থেকে ৩দিন আগে সায়নের সমস্ত পৃথিবী ওলটপালট হয়ে যায়!! সেদিন নয়নিকা সায়ন কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের কেবিনে নিয়ে যায়!!
কেবিনে ঢুকেই সায়ন একটি বিবর্ণ, অসুস্থ, মেয়েকে দেখতে পায়!! মেয়েটির সারা দেহে বিভিন্ন ব্লিডিং স্পট, ফ্যাকাসে চোখ, হলুধাব চেহারা দেখলে মনে হয় সারাদেহে কেউ হলুদ মাখিয়ে দিয়েছে!! কিন্তু একি মেয়েটিকে দেখে সায়নের এমন খারাপ লাগছে কেন??? মেয়েটিকে তার অনেক আপন মনে হচ্ছে কেন?? মেয়েটি কে তার??
"সায়ন, আমার হাতটা একটু ধরবে!!" কথা গুলো শুনে সায়নের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে!! এ যে নয়নিকা!! সেই নয়নিকা যাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে সে!! যাকে ছাড়া সায়নের জীবন অর্থহীন!!
এগিয়ে গিয়ে নয়নিকার হাতকে নিজের হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে!! সায়নের দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামতে থাকে!! সায়নের চোখদুটিকে মুছে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে থাকে নয়নিকা!!
"আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি সায়ন!! ওপারে তোমাকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হবে আমার!! এ জীবনে তোমাকে আপন করে না পেলেও অনন্তকালের জীবনে যেন আপন করে পায়, আল্লাহর কাছে এই দুয়া করি!!" কথাগুলো বলতে বলতে নয়নিকার দুচোখ দিয়ে শেষবারের মতো জল গড়িয়ে পড়ে!!!!
হতভম্ভ সায়ন কেবিন থেকে বেরিয়ে ফার্মেসী থেকে দুইপাতা ডায়াজিপাম কিনে বাড়ি ফিরে আসে। রুমে ঢুকেই সবগুলো ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে!
এর পর আর কিছুই মনে নেই সায়নের!! দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় প্লাবন নামছে সায়নের........
ফোটায় ফোটায় চোখের পানি নয়নিকার মুখে পরায় ঘুম ভেঙ্গে যায় নয়নিকার!! নয়নিকার চোখের কোনে এক চিলতে আশার আলো জ্বলে উঠে!! আনন্দে সায়নকে বুকে জড়িয়ে ধরে নয়নিকা আর কাঁদোকাঁদো কণ্ঠে বলে উঠে "এই ১৫ দিনে তোমাকে নিজের জীবনের চেয়েও অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি!! তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও আমি বাঁচতে পারব না! তোমাকে সব কিছু সেদিন খুলে বলতাম কিন্তু তার আগেই তোমার বোনের ফোনে জানতে পারলাম তুমি দুইপাতা ডায়াজিপাম খেয়ে শুয়ে আছো! আল্লাহর কাছে লাখোকোটি শুকরিয়া যে তিনি তোমাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছেন!! আজ তোমাকে সব কিছু খুলে বলব!!"
কথাগুলো বলতে বলতে নিজের ভ্যানিটিব্যাগ থেকে একটি চিঠি বের করে সায়নের হাতে তুলে দেয় নয়নিকা। চিঠিটি হাতে নিয়ে খুলে পড়তে থাকে সায়ন...
" প্রিয় সায়ন,
হৃদয়ের গভীর থেকে পাঠানো ভালবাসা শেষ বারের মতো অনুভব করে, চিরদিনের জন্য ভুলে যাও। চিঠিটি যখন তোমার হাতে পোঁছাবে তখন আমি তোমাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে অনেক দূরে হারিয়ে গেছি!!
সেদিন ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি এসে হঠাৎ হেমাটোম্যাসিস শুরু হয়। তোমাকে তখন অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ ছিল! এখন বুইঝতে পারি সেদিন ফোন বন্ধ থাকাতেই আমার জন্য ভাল হয়েছিল নাহলে আজ আমার সাথে তুমিও হয়তো পৃথিবীর বাইরে থাকতে!
সেদিন বাবা আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন আমার এ্যকুট লিউকেমিয়া হয়েছে!! বাড়ি ফিরে সেদিন সারারাত শুধু আমাকে আর তোমাকে নিয়ে চিন্তা করেছি। আমিতো এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব কিন্তু তুমি! আমাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে কিভাবে বেচে থাকবে!! তাই তোমাকে না জানিয়েই সকল ব্যবস্থা করে গেলাম তোমার সুখের জন্যে, আমাদের ভালবাসার জন্য!
ভালবাসা মানে শুধু দুজন দুজনকে কাছে পাওয়া নয়। সারাজীবনের জন্য অপরের সুখের নিমিত্তে কিছু করে যাওয়া। সারাজীবন মনের মাঝে ভালবাসার মানুষটিকে বেধে রাখা।
বাবাকে বললাম আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব কিন্ত সায়নকে পৃথিবীতে সারা জীবন সুখে রেখে যেতে চায়। আমার অনুরোধেই বাবা আমার মনোজাইগোটিক বোন, নয়নিকা জুইকে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। বাসার সবায় এমনকি জুইও আমাকে ওয়াদা করেছিল যে এটা তোমাকে কখনো জানাবে না.........
আজ আমি অনেক অসুস্থ! আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে একমাত্র শুধু তোমার কোথায় মনে পড়ছে!! তোমার সাথে কাটানো সেই সোনালি দিন গুলোই চোখে ভেসে উঠছে। তোমাকে অনেক ভালবাসি সায়ন......
জুই এর কাছ থেকে শুনতে পেলাম তোমার মনের মাঝে নাকি তোমার বউয়ের জন্য সেই ভালবাসা উদয় হয়না কিন্তু এজন্য তুমি নিজেকে অনেক বেশি দোষারোপ করছ। আমি জানি কেন এমন হয়।
তোমার কাছে নিজেকে কেমন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে। হয়তোবা তোমাকে ঠকানোর জন্যই এমন হচ্ছে। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি তাই তোমার কাছে আমি অপরাধী হয়ে থাকতে চায় না। এজন্যই তোমাকে সবকিছু জানিয়ে গেলাম।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও! আর তোমার কাছে একটা অনুরোধ নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। তুমি যতদিন পৃথিবীতে বেচে থাকবে ততদিন আমাদের প্রেম বেচে থাকবে।
তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া আমার আদরের ডাক্তার বোনটিকে আমার থেকেও বেশি করে ভালবাসবে। তার মাঝেই আমাকে তুমি খুজে নিবে! আমরা দুবোন যে একই আত্মা!
আমি আর লিখতে পারছি না, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না! শেষ বারের মতো অনুরোধ করছি সারাজীবন দুজন দুজনকে ভালবেসে যাবে! এই ভালবাসার মাঝেই আমি তোমাদের সাথে বেচে থাকতে চায় আজীবন......
ইতি
তোমার ভালবাসা
নয়নিকা সাথি"
সায়নের চোখ থেকে অশ্রু অঝর ধারায় ঝরে যাচ্ছে....
নিজের দুইহাতকে প্রসারিত করে সাথিকে, না...না.... নয়নিকাকে বুকে জড়িয়ে ধরল সায়ন.....
সেই সুখের অনুভূতি যেটা আজ থেকে ১মাস আগে শেষবারের মতো অনুভব করেছিল সায়ন.......
Tuesday, 19 May 2015
কেউ সন্ধ্যাদীপ জ্বালাবে না, নামাযে ডেকে দিবে না!
তুলসী গাছটির নিচে আর কেউ সন্ধ্যাদীপ জ্বালাবে না, ফজরের নামাযে আর কেউ ডেকে দিবে না!
প্রতিদিন যে মেয়েটি সন্ধ্যাদীপ জ্বালাতো আজকের পর থেকে সেই মেয়েটি আর কখনো প্রদীপ জ্বালাবে না। যে ছেলেটি নিয়মিত নামায পরে, হয়তো এরপর থেকে তার ফজরের নামাযটি কাজা হয়ে যাবে ঘুমে আচ্ছাদিত থেকে। হয়তো জীবন থেকে হারিয়ে যাবে স্নিগ্ধ প্রেম, স্রস্টা প্রদত্ত ভালবাসা!
আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে এই মেয়েটির সাথে প্রথম দেখা হয় মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরীতে। রুমে পড়তে ভাল না লাগায় নিয়মিত লাইব্রেরীতে যেতাম। একটি মেয়েকে দেখতাম সবসময় লাইব্রেরীর একটি নির্দিষ্ট দিকেই বসে পড়তে। একদিন গ্রে এর এনাটমি বই নিয়ে এসে একটি মেয়ে আমাকে বলছে হার্টের ভালব এর গঠন বুঝিয়ে দিতে। সেই থেকে রুবি মেয়েটির সাথে পার্টনারশিপ শুরু। নিয়মিত একসাথে লাইব্রেরী তে পড়তাম, রাতের বেলায় মোবাইলে একে অন্যকে প্রশ্ন করতাম আর উত্তর শুনতাম। এভাবে কেটে যায় ১ বছর। ধীরে ধীরে মেয়েটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে আমার নতুন পৃথিবী! যে পৃথিবী রুবি রায় ছাড়া অর্থহীন! আমার স্বপ্নময় পৃথিবীর একমাত্র রাণী সে। তার স্বপ্নলোকের একমাত্র অধিপতি আমি দিপ্ত!
একদিন সকালে আমার বুকে মাথা রেখে সে জানাল, তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে সে জীবন সাথি হিসেবে মেনে নিতে পারবে না! আমিও পারব না তাকে ছাড়া অন্যকাউকে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিতে! দুজনে মিলে তখনই কাজি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করার সিধান্ত নিলাম। কাজি, কনের সম্পূর্ণ নাম শুনে, বরের সম্পূর্ণ নাম শুনলে, আমরা হতবম্ভ হয়ে পড়ি! কনে রুবি রায়, হিন্দু; বর দিপ্ত রহমান, মুসলিম! আমি নিস্তব্ধ কারণ এতোদিন আমি রুবিকে মুসলিম হিসেবেই জানি, রুবি নির্বাক সে আমাকে এতোদিন হিন্দু হিসেবেই জানে! সেদিন কাজি অফিস থেকে ফিরে দুজনেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হয়। দুজনে বিশাল এক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরের মাসেই বিয়ে করে ফেলি।
দাদা-দাদির স্বপ্নকে, বাবা-মায়ের চাওয়াকে, নিজেদের সুন্দর জীবন গড়তে আমি ও রুবি দুজনেই কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করি। একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, ভালবাসা আরো গভীর আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠে। আমি নিয়মিত নামায পড়ি আর আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন সারাজীবন আমাদের দুজনের জীবন স্নিগ্ধ ভালবাসায় পরিপূর্ণ থাকে, সারাটি জীবন যেন এক সাথে পার করে দিতে পারি। রুবিও নিয়মিত পূজা অর্চনা করত, আমাদের বাসার বারান্দার সামনে তুলসী গাছের নিচে সন্ধ্যাদীপ জ্বালাতো। কখনো খুনশুটি করে, কখনো পার্টনারশিপ করে দুজনে রাত ১২টা /১টা প্রযন্ত জেগে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম কিছুই টের পেতাম না। ভোরে রুবির ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গত আমার। ফজর নামাযের জন্য আমাকে ডাক দিয়ে, পূজোর ঘরে ঢুকতো রুবি। এভাবেই খুশিতে দিন কেটে যেত আমাদের!!
কিন্তু সুখ চিরদিন স্থায়ী হয় না! পূর্নিমার এই স্নিগ্ধ আলো অমাবস্যার গহীন অন্ধকারে ঢেকে যাবে কাল থেকে! কালকে রুবিকে আমার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য নিয়ে যাবে, তার বাবা!
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে রুবি!! চারিদিকে ঘন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে..... কোথাও কোন আলোক রেখা দৃষ্টগোচর হয় না......গভীর অন্ধকারে দৃষ্টি ক্ষীন হয়ে আসছে আমার.......
প্রতিদিন যে মেয়েটি সন্ধ্যাদীপ জ্বালাতো আজকের পর থেকে সেই মেয়েটি আর কখনো প্রদীপ জ্বালাবে না। যে ছেলেটি নিয়মিত নামায পরে, হয়তো এরপর থেকে তার ফজরের নামাযটি কাজা হয়ে যাবে ঘুমে আচ্ছাদিত থেকে। হয়তো জীবন থেকে হারিয়ে যাবে স্নিগ্ধ প্রেম, স্রস্টা প্রদত্ত ভালবাসা!
আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে এই মেয়েটির সাথে প্রথম দেখা হয় মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরীতে। রুমে পড়তে ভাল না লাগায় নিয়মিত লাইব্রেরীতে যেতাম। একটি মেয়েকে দেখতাম সবসময় লাইব্রেরীর একটি নির্দিষ্ট দিকেই বসে পড়তে। একদিন গ্রে এর এনাটমি বই নিয়ে এসে একটি মেয়ে আমাকে বলছে হার্টের ভালব এর গঠন বুঝিয়ে দিতে। সেই থেকে রুবি মেয়েটির সাথে পার্টনারশিপ শুরু। নিয়মিত একসাথে লাইব্রেরী তে পড়তাম, রাতের বেলায় মোবাইলে একে অন্যকে প্রশ্ন করতাম আর উত্তর শুনতাম। এভাবে কেটে যায় ১ বছর। ধীরে ধীরে মেয়েটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে আমার নতুন পৃথিবী! যে পৃথিবী রুবি রায় ছাড়া অর্থহীন! আমার স্বপ্নময় পৃথিবীর একমাত্র রাণী সে। তার স্বপ্নলোকের একমাত্র অধিপতি আমি দিপ্ত!
একদিন সকালে আমার বুকে মাথা রেখে সে জানাল, তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে সে জীবন সাথি হিসেবে মেনে নিতে পারবে না! আমিও পারব না তাকে ছাড়া অন্যকাউকে অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে মেনে নিতে! দুজনে মিলে তখনই কাজি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করার সিধান্ত নিলাম। কাজি, কনের সম্পূর্ণ নাম শুনে, বরের সম্পূর্ণ নাম শুনলে, আমরা হতবম্ভ হয়ে পড়ি! কনে রুবি রায়, হিন্দু; বর দিপ্ত রহমান, মুসলিম! আমি নিস্তব্ধ কারণ এতোদিন আমি রুবিকে মুসলিম হিসেবেই জানি, রুবি নির্বাক সে আমাকে এতোদিন হিন্দু হিসেবেই জানে! সেদিন কাজি অফিস থেকে ফিরে দুজনেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হয়। দুজনে বিশাল এক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরের মাসেই বিয়ে করে ফেলি।
দাদা-দাদির স্বপ্নকে, বাবা-মায়ের চাওয়াকে, নিজেদের সুন্দর জীবন গড়তে আমি ও রুবি দুজনেই কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করি। একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, ভালবাসা আরো গভীর আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠে। আমি নিয়মিত নামায পড়ি আর আল্লাহর কাছে দুয়া করি যেন সারাজীবন আমাদের দুজনের জীবন স্নিগ্ধ ভালবাসায় পরিপূর্ণ থাকে, সারাটি জীবন যেন এক সাথে পার করে দিতে পারি। রুবিও নিয়মিত পূজা অর্চনা করত, আমাদের বাসার বারান্দার সামনে তুলসী গাছের নিচে সন্ধ্যাদীপ জ্বালাতো। কখনো খুনশুটি করে, কখনো পার্টনারশিপ করে দুজনে রাত ১২টা /১টা প্রযন্ত জেগে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম কিছুই টের পেতাম না। ভোরে রুবির ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গত আমার। ফজর নামাযের জন্য আমাকে ডাক দিয়ে, পূজোর ঘরে ঢুকতো রুবি। এভাবেই খুশিতে দিন কেটে যেত আমাদের!!
কিন্তু সুখ চিরদিন স্থায়ী হয় না! পূর্নিমার এই স্নিগ্ধ আলো অমাবস্যার গহীন অন্ধকারে ঢেকে যাবে কাল থেকে! কালকে রুবিকে আমার কাছ থেকে চিরদিনের জন্য নিয়ে যাবে, তার বাবা!
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে রুবি!! চারিদিকে ঘন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে..... কোথাও কোন আলোক রেখা দৃষ্টগোচর হয় না......গভীর অন্ধকারে দৃষ্টি ক্ষীন হয়ে আসছে আমার.......